শুক্রবার, ০৪ Jul ২০২৫, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
সংবাদ শিরোনাম :
আবনায়ে ক্বাদিম সাকিতপুর মাদরাসার কমিটি গঠন সমাজ ও রাষ্ট্রের দুষ্টচক্রকে নির্মূল করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা জমিয়তের প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জমিয়তের হেভিওয়েট প্রার্থী হাফিজ মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ দিরাই পৌরসভার বাজেট পেশ সুনামগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় মাদকের চালান আটক দিরাইয়ের সেনা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার ৪, গুলিতে নিহত নিরীহ আবু সাইদ হেফাজতে ইসলাম মিডল‍্যান্ডস শাখা গঠন: সভাপতি মাওলানা এখলাছুর রহমান, সেক্রেটারী মাওলানা এনামুল হাসান সাবীর হত্যার হুমকির শিকার শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাব সদস্য, থানায় জিডি দিরাই-শাল্লার উন্নয়নে ড. শোয়াইব আহমদকে জয়যুক্ত করতে হবে: মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী

অস্থিরতা বিশ্ব জুড়ে: যুদ্ধ সংঘাতে বিপন্ন মানুষের জীবন

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

ভয়াবহ অস্থির এবং সাংঘর্ষিক সময় পার করছে বিশ্ব। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা মহাদেশ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ায় পর্যন্ত এখন যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, সংঘাত আর সন্ত্রাসের থাবা। স্বাধীনতা আন্দোলন আর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে যেমন দমিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে, তেমনি আধিপত্য বিস্তারের স্বার্থে জনপদকে করা হচ্ছে জনশূন্য। একদিকে মানবাধিকারের বলি অন্যদিকে নির্বিচারে চলছে মানুষ হত্যা।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির প্রধান অন্তরায়। নিজভূমে এখন পরবাসী ফিলিস্তিনিরা। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আরবদের সঙ্গে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে ইসরাইল। এসব যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের জন্য বরাদ্দকৃত অঞ্চলের অর্ধেকের বেশি দখল করে নিয়েছে ইহুদীরা। সেই ভূমিতে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন ও ইসরাইলি দখলদারিত্ব থেকে মুক্তির আন্দোলনে এখনো রক্ত ঝরছে ফিলিস্তিনিদের। ইসরাইলি বাহিনী ‘রুটিন’ মাফিক তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। অস্ত্রের মুখে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার আন্দোলনকে দমিয়ে রেখেছে। ফিলিস্তিনিদের ছোড়া পাথরের জবাব বন্দুকের গুলিতে দিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ঘিরে বিভিন্ন মেরুকরণে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিরাজ করছে অস্থিরতা।

সম্প্রতিকালে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে ইরানকে ঘিরে। ইরানের সঙ্গে বহুজাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে এসেছে। ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন অবরোধ এবং হরমুজ প্রণালীতে তেল ট্যাংকারে হামলার পর দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো অঞ্চলে।

ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে আট বছর। আরব বসন্তের পর সশস্ত্র আন্দোলনের মুখে রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনে এখনো ক্ষমতায় রয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। কিন্তু বিদ্রোহী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে ভেঙ্গে পড়েছে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা। বিপন্ন হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন এখন ক্ষমতাধর বিভিন্ন রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি পরীক্ষার ল্যাবে পরিণত হয়েছে। ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের শুরুটাও হয় আরব বসন্ত দিয়ে। শান্তির আন্দোলন রুপ নিয়ে অশান্তি ও দুঃসহ কষ্টে। ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদারাবুহ মানসুর হাদিকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে সৌদি আরবসহ আটটি সুন্নি দেশ একজোট হয়ে ইয়েমেনে অভিযান চালাচ্ছে। এই জোটকে লজিস্টিক আর ইন্টেলিজেন্স সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর ফ্রান্স। সৌদি আরবের অবরোধের কারণে দেশটিতে কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইয়েমেনের পরিস্থিতি হলো, বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব-সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়।

নাইন/ইলেভেন সন্ত্রাসী হামলার জবাবে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানদের ক্ষমতা থেকে হটানো গেলেও দেশটিতে শান্তি আসেনি। সরকারবিরোধী তালেবান ও অন্য জঙ্গিদের হামলা প্রায় প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রাণ। সর্বশেষ গত শনিবার কাবুলে বিয়ে বাড়িতে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ৬৩জন।

২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অভিযান সাদ্দাম হোসেনের বিদায় নিশ্চিত করলেও দেশটিতে শান্তির পরশ দিতে পারেনি। বিভিন্ন সময় বিদ্রোহীদের হামলায় প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ ইরাকিদের। ইরাক এখন যেন এক অনিরাপদ রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক অ্যাফায়ার্সের তথ্যমতে, নাইন ইলেভেন হামলার পর ইরাক, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে ৪ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৫ লাখ ৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আফগানিস্তানে ৩৮ হাজার ৪৮০ জন, পাকিস্তানে ২৩ হাজার ৩৭২ এবং ইরাকে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৭২ থেকে ২ লাখ ৪ হাজার ৫৭৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া তিন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯ হাজার ঠিকাদার প্রাণ হারিয়েছেন।

পশ্চিমাদের নীল নকশায় লিবিয়ায় মুয়াম্মর গাদ্দাফির পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু বিদ্রোহী বিভিন্ন গোষ্ঠী এখন দেশটির মানুষের জীবনকে আরো বেশি বিপন্ন করে তুলেছে। রাজধানী ত্রিপোলি এখন ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড’। দেশটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রয়েছে লাখ লাখ মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের অস্থিতিশীলতা অবৈধ অভিবাসনের হার বাড়াচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে ভারত সরকার। এই সিদ্ধান্তে কাশ্মীরিদের বিরোধিতা ঠেকাতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের আগেই কাশ্মীরজুড়ে সেনা সংখ্যা বাড়ানো হয়। কারফিউ জারির পাশাপাশি টেলিফোন, ইন্টারনেট ও মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ কাশ্মীরি। সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি নিহত ও আটক হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। সম্প্রতি সীমান্তে গোলাগুলিতে বেশ দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হয়েছেন।

মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যে সেনাদের বর্বরতার শিকার সংখ্যালঘুরা। সম্প্রতি মিয়ানমারে জাতিসংঘের নিযুক্ত মানবাধিকার বিষয়ক দূত ইয়াং লি বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে চলা ভয়াবহ সংঘর্ষে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।

চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে গত ১১ সপ্তাহ ধরে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে। প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের আন্দোলন এখন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে সামরিক বাহিনী প্রস্তুত রেখেছে চীন। বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে চীন বলেছে, তারা আগুন নিয়ে খেলছে। চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। উইঘুর শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করারও অভিযোগ রয়েছে।

উত্তর কোরিয়া যাতে পরমাণু শক্তিধর দেশ হতে না পারে সেজন্য বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসী মনোভাবের কারণে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। গত বছর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের দুই দফা বৈঠক হলেও কোনো সফলতা আসেনি। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির মানবিক চিত্র ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।

ভেনিজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। বিরোধী নেতা গুয়াইদোকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশ গুয়াইদোকে সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু সেনাবাহিনী মাদুরোর পক্ষে থাকায় এখনো তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হয়নি। চলমান আন্দোলনে ১৬৫ ভেনিজুয়েলান নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে। তবে সেন্টার ফর ইকোনোমিক অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় কেবল মাদুরো প্রশাসনেরই ক্ষতি হয়নি, দেশটির ৪০ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে।

দেশটিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে। বহু বিরোধী নেতাকে আটক করা হয়েছে। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কয়েকজন বিরোধী প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে সরকার। এর বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলেও নিরাপত্তা বাহিনী দমন করছে কঠোরভাবে।

সুদানের জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ভাগা-ভাগিতে রাজি হয়েছে সামরিক জান্তা। নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম, সোমালিয়ায় আল শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠীর হানায় জন-জীবন বিপর্যস্ত।

পশ্চিমাবিশ্বে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধের মতো ঘটনা এখন না থাকলেও বর্ণবাদ ও ধর্মীয় বিদ্বেষের বিস্তার মানুষের জীবনকে অস্থিতিশীল ও অনিরাপদ করে তুলেছে। জঙ্গি হামলার ঘটনার পাশাপাশি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের নামে নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী বর্তমান বিশ্ব। একের পর এক বন্দুক হামলা সাধারণ মানুষকে অসহায় করে তুলেছে।

গত ২ আগস্ট সোভিয়েত যুগে রাশিয়ার সঙ্গে করা গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘দি ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি’ বা আইএনএফ চুক্তিটি ছিল মূলত অস্ত্র প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি। চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন এবং মস্কোর এই উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার তুলনায় বেশি প্রভাব পড়তে যাচ্ছে ইউরোপের নিরাপত্তার ওপর। যে কারণে অদূর ভবিষ্যতে সংঘাত, যুদ্ধে আরো মানুষের জীবন বিপন্নের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

সূত্র: উইকিপিডিয়া ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com